জীবন রক্ষাকারী ভেজাল ও নকল ওষুধ খেয়ে কিডনি, ক্যানসারসহ নানা ধরনের রোগে শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সী লোকজন ব্যাপক হারে আক্রান্ত হচ্ছে। ভেজাল ও নকল ওষুধ সেবন দেশে মৃত্যুর হার বৃদ্ধির অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ। অতি সম্প্রতি একটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত দুটি প্রতিবেদনে ভেজাল ওষুধ এবং এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স নিয়ে আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। একাধিক ওষুধ ব্যবসায়ী জানান, নকল, ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ খেয়ে হঠাৎ কিংবা স্থায়ীভাবে কিডনি বিকল ও ক্যানসারসহ জটিল রোগ দেখা দিচ্ছে এবং মৃত্যুও হচ্ছে।
পুরান ঢাকার মিটফোর্ড ওষুধ মার্কেট থেকে রাজধানীসহ সারা দেশে এসব ওষুধ সরবরাহ হয়। অর্ধশতাধিক ব্যক্তির নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট পুরো বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, এই সিন্ডিকেট জেনেশুনে হত্যাকাণ্ডের সমান অপরাধ করছে। অনেকেই র্যাবকে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশ করেছেন।
ওষুধ বিক্রির দায়িত্ব ফার্মাসিস্টদের হলেও প্রায় ৯০ ভাগ দোকানে তাদের অনুপস্থিতি ও নৈরাজ্য দেখা যায়। কর্তৃপক্ষ মাঠে কাজ চালানোর দাবি করলেও ব্যবসায়ীরা বলেছেন, দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই।
এক ব্যবসায়ী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মিটফোর্ড মার্কেটে আমার দুটি দোকান ছিল, ২০ বছর ব্যবসা করেছি। অনেককে দেখেছি ভেজাল ওষুধ বিক্রি করতে। সমিতির কিছু নেতা এ কাজে উৎসাহ দিয়েছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘চাপের মুখে আমি দোকান বিক্রি করে ধানমন্ডিতে চলে যাই।’ মোবাইল কোর্ট মাঝেমধ্যে অভিযান চালালেও নকল ওষুধের সরবরাহ থামেনি।
বিদেশি ওষুধের নকল বেশি হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, এই সিন্ডিকেটের সঙ্গে ওষুধ প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তা জড়িত।
১৯৮০-এর দশকে ভেজাল প্যারাসিটামল খেয়ে ২ হাজারের বেশি শিশু মারা যায়। এরপরও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। প্রতিদিন বহু মানুষ এই বিষ সেবন করে মারা যাচ্ছে—তথ্য, নজরদারি কিছুই নেই।
কিডনি ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন অর রশীদ বলেন, ‘ভেজাল ওষুধ কিডনি বিকলের অন্যতম কারণ। চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া ওষুধ বিক্রি বন্ধ করতে কঠোর শাস্তি জরুরি।’
শিশু হাসপাতালের সাবেক পরিচালক ডা. শফি আহমেদ মোয়াজ বলেন, ‘আইন প্রয়োগ করে শাস্তি নিশ্চিত করলে এই প্রবণতা কমবে।’
এক বিশেষজ্ঞ ক্যানসার চিকিৎসক বলেন, ‘ভেজাল ওষুধ খেয়ে কত লোক ক্যানসারে মারা যাচ্ছে, তার তথ্য নেই।’
ডা. আয়েশা আক্তার বলেন, ‘জরুরি শাস্তি ছাড়া ভেজাল ওষুধ ঠেকানো যাবে না।’
ডা. এমএন হুদা বলেন, ‘চর্মরোগের বিস্তারে নকল ওষুধ দায়ী। প্রতিটি ওষুধ আমদানির আগে পরীক্ষা জরুরি।’
সাবেক ম্যাজিস্ট্রেট রোকন উদ-দৌলাহ বলেন, ‘উপস্থিত পরীক্ষা করে তাৎক্ষণিক শাস্তির ব্যবস্থা নিলে এটি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।’
তথ্যসূত্র: ইত্তেফাক


